শুরুর কথা : কিছু পাতা অধ্যয় ১

শুরুর কথা : কিছু পাতা অধ্যয় ১

 

আমার নাম মেহেদী আব্দুল্লাহ, নামটা খুব সুন্দর এবং আমি পছন্দও করি। নামটা আমার বাবার দেওয়া। কিন্তু তারপরও আমি এই নাম পরিবর্তন করে ফেলেছি কিন্তু কেন তাই না, হ্যাঁ এ নামটা খুব বেশী ঈড়সসড়হ আর আমি সব সময় ভিন্ন কিছু ভালবাসি তাই, কিন্তু পৃথিবীতে এতো মানুষ যে, সব সুন্দর নামগুলোই আজ ঈড়সসড়হ হয়ে গেছে। গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম কি নাম দেওয়া যায়, নামটা যতটা না সুন্দর হবে তার চেয়ে বেশী টহপড়সসড়হ আর অর্থহীন হতে হবে। শেষ-মেষ মাথায় একটা অদ্ভুত নাম এসে পড়েছে যে নামের অর্থটা আমি জানি না, যে নামটা যে কেউ প্রথমবার শুনে একটু হলেও সমালোচনা করবেই। আর উচ্চারণের ক্ষেত্রে অনেকের তো দাত দুইটাই ভেঙ্গে যায় আবার অনেকে ভাবে এটা হয়তো বা কোন মেয়ের নাম। আর হ্যাঁ নামটার ইংরেজীতে লেখার স্টাইলটাও একটু ভিন্ন, হ্যাঁ এবার আমার নামটা বলি ঝড়ৎৎু লিখি গবহধভধ আর বাংলায় মেনাফা। এরপর থেকে আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে তোমার নাম কি?
আমি বলি মেহেদী…….. মেহেদী মেনাফা।

অনেকে আমার এই ঈড়সসড়হ-ঁহপড়সসড়হ এর যুক্তি মানতে মোটেই রাজি না, অনেকে বলে এটা একটা সয়তানি কিন্তু আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি সে সময়ের কথা, আমাদের ক্লাসে মেহেদী নামে আরেকটা ছেলে ছিল, মানে আমার মীতা। একদিন আমি ক্লাসে যাইনি, সেদিন আমার মীতা মেহেদী প্রিন্সিপালের মেয়েকে চোখ মারল। পরদিন আমি ক্লাসে যেতেই বাংলা স্যার ক্লাসে এসে হাজির, বল্লেন মেহেদী কে?

আমি বললাম: স্যার, আমার নাম মেহেদী।
স্যার: লাইব্রেরীতে আয় তোরে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকে।
আমি তাই গেলাম এবং ঢুকতেই দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে দেওয়া হলো, প্রথমেই বাংলা স্যারের ঊহমষরংয ংঃুষব এর মাইর খাইলাম এবার
প্রিন্সিপাল স্যার: কি রে বেশী বাদরামি করিস?
আমি: স্যার, আমি কি করলাম স্যার?
প্রিন্সিপাল স্যার: বেয়াদব শুনতে ইচ্ছে করে আবার, তোর মত কত বেয়াদবকে মানুষ করলাম।
আমি: স্যার আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
প্রিন্সিপাল স্যারের কষা এক থাপ্পর ডান গালে লাগল, তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে মনে মনে হয়তো ভেবেছেন আরেকটা দেই নয়ত পোলাটার বিয়া হবে না জীবনে, সাথে সাথেই আমার বাম গালটাও ফাটলো, মনে হয়েছে যেন প্রথমটার ওজন ১০ শম আর দ্বিতীয়টা ১০সম১০ সম =১০০ সম. পরবর্তীতে অবশ্য প্রিন্সিপাল স্যারের ভুল ভেঙ্গেছিল, তখন শুধুই সরি বলেছেন। এই হচ্ছে কমন নামের রেজাল্ট বা প্রাপ্য এ রকম আরও কয়েকটা ঘটনার কারণে আমার নাম ঈযধহমব করা। এবার কি নামটা ঈযধহমব করা যুক্তি সঙ্গত?

 

 

স্কুল জীবনের শেষে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কতটা ভালবাসতেন, স্যাররা প্রায় সবাই আমাকে অনেক ভালবাসতেন। শেষ স্কুল জীবন, এখন আমি মুক্ত। আমি ঝপরবহপব এর ছাত্র আমার জবংঁষঃ এস.এস.সিতে খুব ভাল তাই নিশ্চিন্তে যে কোন কলেজে ভর্তি হতে পারব বলে ভেবেছিলাম কিন্তু পরে দেখি আমার মত এ-৫ পেয়েছে আরও ১০-১৫ হাজার। তাই ঢাকা কলেজে চান্স পেলাম না। প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে আবার খুশি হয়েছি কারণ, ঢাকা কলেজে ও যে আমাদের স্কুলের মত কোন মেয়ে নাই। তাই যাইয়া কোন লাভও নাই। তার পর শেষ মেষ ভর্তি হলাম ইধহমষধফবংয জরভবষং. ক্লাস শুরু হতে আরও দুই-তিন দিন বাকি। তাই ভাবলাম এ কয়দিন আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দিব। বিকালে ধানমন্ডি লেকে গেলাম। এক বন্ধু এর সাথে দেখা করতে, ওর নাম ফাহাদ। ও ঢাকাইয়া, পোলাটা মানে ছেলেটা খুব মোটা তাই আমরা ওকে আদনান সামি বলি। সময়মত হাজির আদনান সামি।
প্রথমেই আমি বললাম: কি রে কি খবর?
আদনান: ভাল, তুই হালায় কই ভর্তি হইচোছ রে?
: ইধহমষধফবংয জরভবষং
: আমি হালায় আমগো পুরান ঢাকায় ভর্তি হইচি, আর নয়া ঢাকায় আমু না, বুজবার পারলি?
: তোদের কলেজে কি মেয়ে আছে?
: মাইয়া, কিল্লাই গা?
: না এমনি,
: আরে মামু একটা কথা কই, মাইয়ারা হইতাছে গিয়ে তরল পদার্থ বুঝবার পারলি
: মানে, বুঝলাম না?
: হালায় চাইন্সে পইড়া বুঝোস না, মাইয়ারা হইতাছে গিয়া তরল পদার্থ আর পোলারা হইতাছে গিয়া কঠিন পদার্থ।
: তোর মতে মাইয়ারা ঝড়ৎৎু মেয়েরা হচ্ছে তরল অর্থাৎ ওদের নির্দিষ্ট আকার নেই কিন্তু আয়তন আছে যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে আর ছেলেরা কঠিন পদার্থ। নির্দিষ্ট আকার, আয়তন আছে।
: হ মানে মাইয়াগো মনটা হয়তাছে তরল পদার্থের লাহান আর পোলাদের মনডা হইতাচে গিয়া কঠিন পদার্থ।
: আচ্ছা তাহলে গ্যাসীয় পদার্থ কারা?
: গ্যাসীয় পদার্থের তো কোন আকার, আয়তন নাই এল্লেইগা এইটা হইতাচে গিয়া নয়া প্রেমিক-প্রিমিকার মনের লাহান, এইডির মনডাতে কোন বাধাঁ-টাধা নাইকা। যতবড় স্বপ্ন দেখবার ইচ্ছা হয় তত বড় স্বপ্ন দেখবার শুরু কইরা দেয়।
: দোছ! তুই কোন ছ্যাকা খাইলি নাকি?
: আরে তুই কি পাগল হইচোছ আমারে ছ্যাক দিব এরম মাইয়া জন্ম লইচে কোন মায়ের পেডে?

এভাবে আড্ডা দিয়ে পার করলাম দিনগুল। ভাবতে শুরু করলাম নতুন জীবনটা কেমন হবে, পুরান বন্ধুগুলো কত দূরে চলে যাবে সবাই তার নিজ নিজ পথে, সবচেয়ে খারাপ লাগছে আমার ঈষড়ংব ভৎরবহফ ফালা, শান্ত, মুরশেদের কথা ভেবে। এতোদিন কতটা কাছাকাছি থাকতাম আমরা প্রায় প্রতি শুক্রবার ধানমন্ডি লেকে আড্ডা দিতাম, প্রতিদিন ক্লাসে জায়গা নিয়ে কত মারামারি। সেই দিনগুলোর কথা ভেবে খুব খারাপ লাগে, তারপরও নতুন জীবনের অপেক্ষা করছি।

কাল থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে। রাত ১টা বাজে কিন্তু আমার চোখে ঘুমের কোন পাত্তাই নাই, ভাবছি মাইয়াদের সাথে ঝড়ৎৎু মেয়েদের সাথে কি ভাবে কথা বলব, কোন দিনও মেয়েদের সাথে ক্লাস করিনি, খুব ভয় লাগছে যদি মেয়েদের সামনে স্যার আমাকে কান ধরে টঢ়-ফড়হি করায়, লজ্জায় তো মইরেই যাব। ভাবতে ভাবতে সকাল।

আমাদের ক্লাস দুপুর ১২টায়, সময়টাও একটু টহপড়সসড়হ তাই না, বেশীর ভাগ কলেজে ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে কিন্তু আমাদের দুপুর ১২টিায় একটু কষ্ট হবে ভাত খেয়ে কলেজে যেতে হবে।

সময় মত ক্লাসের জন্য বাসা থেকে বের হলাম। কলাবাগান বাসষ্ট্যান্ড থেকে ৯ নাম্বার বাসে উঠে নিউ মার্কেট, আবার ঐখান থেকে একটা রিকশা নিলাম, রিকশা চালক বয়েসে আমার সমান হবে। হাতে একটি ঘধাু ংঢ়বপরধষ ভরষঃবৎ, মোটামুটি পরিস্কার একটি স্মার্ট ছেলে। কিন্তু, ঘামে পুরা ভিজে চাপচুপ। মনের সুখে একটা গানও গাচ্ছে, ‘ভালবাসি বলেরে বন্ধু আমায় কাদাঁলে’ গানটা শুনতে শুনতে কলেজে হাজির।

কলেজে ঢুকে প্রথমেই শ্রেণী কক্ষ খুজে বের করে নিলাম। একটা তিরিশ মিনিটে শ্রেণী কক্ষে একজন শিক্ষক প্রবেশ করলেন সাথে সাথে সবাই ঝঃধহফ ঁঢ়, তারপর সবার পরিচয় দিতে শুরু করল। একজন একজন করে আমার পালা এবার আমি দাড়িয়ে বললাম আমার নাম, মেহেদী মেনাফা।
স্যার: মেহেদী মোনাফা?
: জ্বি না স্যার মেনাফা,
: এটা কি ছেলেদের নাম নাকি?
ক্লাসের মধ্যে হাজির রোল পড়ে গেল মনে হয় মি: বিন হচ্ছে। মেয়েদের মধ্যেও হাসির রোল পরে গেল। আর আমি একটু লজ্জা পেলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলাম।
স্যার: সিট ডাউন।
প্রথম দিনের মত ক্লাস করে বাসায় ফিরলাম।

এভাবেই চলতে থাকলো আমার কলেজ জীবনের প্রথম দিনগুলো, অনেক নতুন নতুন বন্ধুও হয়েছে সর্বপ্রথম যার নাম বলব সে হচ্ছে আমাদের ক্যাপ্টেন সাহেব রুহুল আমীন তারপর হচ্ছে মেয়েদের মধ্যে ক্যাপ্টেন সাথী, আর ভাল বন্ধু হচ্ছে আনোয়ার, শরিফ, তৈয়্যব আরও অনেকে। কিন্তু আমি এখনও আমার স্কুলের বন্ধুদের খুব মিস করি, যদি ফালা থাকতো আমার সাথে, ফালা আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ও কেই সবচেয়ে বেশী মিস করি।

 

 

 

.: কিছু পাতা । মেহেদী মেনাফা :.

একটি ভালবাসার গল্প

edited

“কিছু পাতা”উপন্যাসটি আমার জীবনের কিছু সত্য এবং কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে লেখা। এটাই আমার জীবনের প্রথম লেখা উপন্যাস, তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

(if you can’t read cause of Bangla text, you can try image format at this link http://www.black-iz.com/vinnokobor/kisupata.html) (Also you can download this book from this link @ http://www.black-iz.com/kp/kisupata.doc)

Muhammad Mehedi Menafa at facebook : www.facebook.com/muhammadmehedimenafa

Related posts